মুজিববর্ষকে সামনে রেখে গেল নভেম্বরে চট্টগ্রাম নগরীর মশা নিধনে ঢাক ঢোল পিটিয়ে নিজেদের মহা পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। এ পরিকল্পনায় বলা হয়েছিল, প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৪ ভাগে ভাগ করে প্রতিটি ভাগের রাস্তা, ফুটপাত, গলি, উপ-গলি, নালা-নর্দমা ‘যথাযথভাবে’ পরিষ্কার এবং এছাড়া মশক নিধনে স্প্রে করা হবে। প্রতি মাসে ৪ বার এ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। কিন্তু বর্তমান দৃশ্যপটে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেল আসন্ন নির্বাচন জটিলতায় থমকে গেছে চসিকের মশা মারা কার্যক্রম।
এদিকে নগরবাসীরা বলছেন, মাসে চারবার তো নয়ই গত ৪ মাসে একবার মশক নিধনে নিয়োজিত স্প্রে ম্যানদের দেখা মেলেনি নগরে। এছাড়াও রাস্তাঘাট–ফুটপাত মাঝেমাঝে পরিষ্কার করতে দেখা গেলেও নগরীর বেশির ভাগ এলাকায় নালা-নর্দমা পরিষ্কার হয়েছে শেষ কবে তা হয়তো মনে নেই স্বয়ং চসিকের দায়িত্ব প্রাপ্তদেরও। শীতের শেষ সময়ে এসে মশার উপদ্রব বাড়ায় চসিককে নিয়ে এমনটাই অভিযোগ নগরবাসীর।
সমস্যা সমাধানে চসিকের সাথে সরাসরি যুক্ত নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। কিন্তু এই সমস্যা সমাধানে চসিকের পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উপায় জানতে চেয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে বিভিন্ন সংকটের কথা জানিয়ে নিজেদের ‘অসহায়ত্বের’ কথা জানালেন তারাও।
কাউন্সিলররা জানান, বেশির ভাগ ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে একটি করে ফগার মেশিন (মশার ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র)। কিন্তু বেশিদিন ব্যবহারে ফলে এসব মেশিন এখন অকেজো প্রায়। এক ঘণ্টা ব্যবহারের পরই গরম হয়ে আগুন ধরে যাচ্ছে এসব মেশিনে। তার সাথে স্প্রে ম্যানদের সংকট তো আছেই।
কিন্তু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চসিকের প্রধান পরিছন্ন কর্মকর্তা শেখ শফিকুল মান্নান সিদ্দিকী জানান, প্রতিটি ওয়ার্ডে ২-৪টি ফগার মেশিন দেওয়া হয়। আর স্প্রে ম্যান দেওয়া হয় ৩/৪ জন। এডাল্টিসাইড (পূর্ণাঙ্গ মশার ধ্বংসকারী) লার্ভিসাইড (লার্ভা ধ্বংসকারী) ওষুধের মজুত আছে যা অন্তত আরো ১ মাস চলবে। তবে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘চেষ্টা করছি আমরা নতুন ওষুধ কেনার। ইলেকশন তো তাই টেন্ডারে যেতে পারছি না। ইলেকশন চলে যাওয়ার পরে ওষুধ কিনবো।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে চসিকের এক কাউন্সিলর বলেন, ‘আগে আমরা এডাল্টিসাইড ও লার্ভিসাইড দুটো ওষুধ পেতাম কিন্তু বর্তমানে এডাল্টিসাইড ওষুধ দেওয়া হচ্ছে মাসে একবার তাও অপ্রতুল। ফলে মশার ওষুধ ছিটানোর পর কিছু সময়ের জন্য মশা কম থাকছে। কিন্তু একদিন না পেরুতেই নতুন লার্ভা থেকে আবারও মশার সৃষ্টি হচ্ছে।
নগরের বিভিন্ন নালা-নর্দমার বদ্ধ পানিতে দেখা প্রচুর মশা দেখা যাচ্ছে। কীটতত্ত্ববিদরা বলছেন সেখানে ডিম পাড়ছে মশা। ওষুধ ছিটিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে তা নগরবাসীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠবে। বর্তমানে শুষ্ক মৌসুম হওয়ায় নালা-নর্দমায় পানি জমাট হয়ে সেখানে ডিম ছাড়ে ফাইলেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের জীবণুবাহী মশা। বর্ষায় অতিবৃষ্টির ফলে এসব ডিম বা লার্ভা ধ্বংস হয়ে যায়। তবে শুষ্ক মৌসুমে পানি জমাটবদ্ধ হয়ে থাকায় ধ্বংস হয় না। তাই এসময়টাতে মশার লার্ভা ধ্বংসকারী ওষুধ ছিটানোর উপর জোর দিতে হবে।
পাঠকের মতামত: